“I want to
suck your big penis” – চমকাবেন না। ফেসবুকের ইনবক্সে এরকম মেসেজ পাওয়ার এরকম নাছোড় অভিজ্ঞতা
নিশ্চয়ই অনেকেরই হয়েছে। ফেসবুকে এরকম অনেক নারীপুরুষ তাঁদের যৌনসঙ্গী খুঁজতে সরাসরি
এইভাবে প্রস্তাব রাখে। এঁরা আদতে সমকামী। পুরুষ খোঁজে পুরুষকে, নারী খোঁজে নারীকে। প্রথম পক্ষ ‘গে’, অপরপক্ষ ‘লেসবিয়ান’।
বাজারি নাম ‘হিজড়ে’ বা ‘হিজড়া’।
হিজড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবহৃত একটি পরিভাষা -- বিশেষ
করে ভারতের ট্রান্সসেক্সুয়াল বা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিকে বুঝিয়ে থাকে। চিকিৎসা
বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্মপরবর্তী
লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়, মূলত তারাই হিজড়া।
হিজড়া শব্দের অপর অর্থ হচ্ছে ‘ট্রান্সজেন্ডার’, ট্রান্সজেন্ডার বলতে এমন এক লৈঙ্গিক অবস্থাকে বোঝায় যা দৈহিক বা
জেনেটিক কারণে মেয়ে বা ছেলে কোনো শ্রেণিতে পড়ে না। প্রকৃতিতে কিছু মানুষ নারী
এবং পুরুষের যৌথ বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বাংলা ভাষায় এই ধরনের মানুষগুলো
হিজড়া নামে পরিচিত। সমার্থক শব্দে শিখণ্ডী, বৃহন্নলা,
তৃতীয় লিঙ্গ, উভলিঙ্গ, নপুংসক, ট্রান্সজেন্ডার (ইংরেজি), ইনুখ (হিব্রু), মুখান্নাতুন (আরবি), মাসি, বৌদি, চাচা,
তাউ, ওস্তাদ, মাংলিমুখী,
কুলিমাদর, ভিলাইমাদর, মামা, পিসি, অজনিকা
ষণ্ড, অজনক, সুবিদ, কঞ্চুকী, মহল্লক, ছিন্নমুষ্ক,
আক্তা, পুংস্তহীন ইত্যাদি। হরিদ্বারে
হিজড়াদের সকলে তাওজি বা পণ্ডিতজি বলে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মে হিজড়াদের সম্পর্কে
আলোচনা করা হয়েছে।

ইসলাম ধর্মে হিজড়া : হজরত ইব্রাহিমের বংশধরদের মাধ্যমে
পৃথিবীর বুকে প্রচারিত ধর্মগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় ইব্রাহিমীয় ধর্ম। ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম,
ইহুদি ধর্ম -- এগুলো সবই ইব্রাহিমীয় ধর্ম। প্রতিটি ইব্রাহিমীয়
ধর্ম পুরুষ এবং নারী সৃষ্টির ব্যাপারে আদম এবং হাওয়া (ইভ)-এর গল্প বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ প্রথমে মাটি থেকে তৈরি করেন আদমকে। আদমের বুকের পাঁজর দিয়ে তৈরি করেন বিবি
হাওয়াকে। তাহলে আল্লাহ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কিভাবে তৈরি করেন ? নারী ও পুরুষের পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বা হিজড়া কীভাবে সৃষ্টি
করা হল, এই বিষয়ে পৃথিবীর কোনো ধর্মেই আলোচনা করা হয়নি।
ইসলামে তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়াদের “মুখান্নাতুন”
হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আরবি ভাষায় “মুখান্নাতুন”
বলতে মেয়েদের মত আচরণকারী পুরুষদেরকে বোঝানো হয়। এক্ষেত্রে
যেহেতু শুধুমাত্র মেল টু ফিমেল ট্রান্সসেক্সুয়ালদের বোঝানো হয়, তাই আরবি “মুখান্নাতুন” হিব্রু সারিস বা ইংরেজি “ইউনুখ”-এর সমার্থক শব্দ নয়। কোরানে কোথাও “মুখান্নাতুন”
সম্পর্কে কিছু বলা হয় নাই। কিন্তু হাদিসে “মুখান্নাতুন”-এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
আন নবি বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, একজন “মুখান্নাতুন” হচ্ছে সেই পুরুষ, যার চলাফেরায়, চেহারায় এবং কথাবার্তায় নারী
আচরণ বহন করে। তারা দুই প্রকারের : প্রথম প্রকারের হচ্ছে তারাই যারা এই ধরনের আচরণ
ইচ্ছাকৃতভাবে করে না এবং তাদের এই ব্যবহারে কোনো দোষ নেই, কোনো অভিযোগ নেই, কোনো লজ্জা নেই যতক্ষণ
পর্যন্ত তারা কোনো অবৈধ কাজ না করে এবং পতিতাবৃত্তিতে না জড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয়
শ্রেণির ব্যক্তি হচ্ছে তারাই যারা অনৈতিক উদ্দেশ্যে মেয়েলি আচরণ করে। হজরত ইবনে
আব্বাস বলেছেন – হিজড়ারা জিনদের সন্তান। এক ব্যক্তি আব্বাসকে
প্রশ্ন করেছিলেন – এটা কেমন করে হতে পারে ? জবাবে তিনি বলেছিলেন – “আল্লাহ ও রসুল (সাঃ)
নিষেধ করেছেন যে মানুষ যেন তাঁর স্ত্রীর পিরিয়ড বা মাসিক স্রাব চলাকালে যৌনমিলন না
করে”। সুতরাং কোনো মহিলার সঙ্গে তার ঋতুস্রাব হলে শয়তান
তার আগে থাকে এবং সেই শয়তান দ্বারা ওই মহিলা গর্ভবতী হয় এবং হিজড়া সন্তান
(খুন্নাস) প্রসব করে (সুরা বাণী ইস্রাইল – আর রাহমান-৫৪,
ইবনে আবি হাতিম, হাকিম তিরমিজি)। ইসলামী
দেশগুলির মধ্যে ইরানে সব থেকে বেশি রুপান্তরকামী অপারেশন করা হয়। তারা তৃতীয়
লিঙ্গের ব্যক্তিকে যে-কোনো এক লিঙ্গে রুপান্তর হওয়ার সুযোগ দেয়।